15 C
Dhaka
Monday, December 23, 2024

‘আরিফুলকে কতদিন বলেছি, আমার জীবনটা শেষ করে দিস না, নিউজ আইটেম বানাইসনা’

‘বাংলাদেশে থাকার সময় আরিফুল ইসলামকে কতদিন বলেছি, আমার জীবনটা এভাবে শেষ করে দিস না। প্লিজ আমারে নিউজ আইটেম বানাইসনা। এটা বলে বোঝাতাম যে, কোনো সময় আত্মহত্যা করলে আমার সঙ্গে আরিফুলও নিউজ আইটেম হবে। কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছি। তবে শেষ পর্যন্ত আমি নিউজ আইটেমই হলাম। আমার পরিবারের সদস্যরা ভয়ংকর পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।’- আরিফুল হত্যায় অভিযুক্ত কানাডাপ্রবাসী পারভীন নিজেই শুক্রবার (৭ জুন) দেশের জাতীয় দৈনিক সমকালকে এসব তথ্য জানান।

তিনি আরও বলেন, ‘কানাডায় যাওয়ার পর এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে, তা ভাবনায় ছিল না। জাপান থেকে ভিডিও পাঠিয়ে আরিফুলের হুমকির ঘটনায় স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে কান্নায় ভেঙে পড়ি। কে কাকে সান্ত্বনা দেব। নরসিংদীতে আরিফুলের বোনসহ তার আত্মীয়স্বজনকে ফোন করে সব ঘটনা খুলে বলেছি। তারা যেন আরিফুলকে নিবৃত্ত করেন, সেই কাকুতিমিনতি করেছি। বাধ্য হয়ে জাপান পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। চেয়েছিলাম তারা যেন আরিফুলকে হেফাজতে নেয়। আর তার জাপানি স্ত্রী যেন ঘটনাটি জানতে পেরে স্বামীকে বোঝায়।’

হোয়াটসঅ্যাপে পারভীন বলেন, ‘এখন অনেকে বলেন, কেন আগে থেকে আমি তাদের সহযোগিতা নিইনি? আমি কী সহযোগিতা নেব! নিজের জীবন থেকে শিখেছি কারও দুর্বল পয়েন্ট কাউকে জানালে সে তাকে আরও চেপে ধরে। দুর্বল পয়েন্টের সুযোগ নিয়ে জীবন শেষ করে দেয়। দিনের পর দিন দরজা বন্ধ করে কেঁদেছি। আমার মা ভাবতেন, কানাডাপ্রবাসী স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য হচ্ছে। দিনের পর দিন আরিফুল ওর বাসায় নিয়ে আমার সঙ্গে যে জঘন্য কাজ করেছে, সেটা তো তার মা ও আত্মীয়স্বজনের অনেকে আন্দাজ করেছে। তারা কেন আরিফুলকে বাধা দেননি– এই প্রশ্নটা ওদের করেন।’

আরও পড়ুনঃ  'এসআই সুমন বলছি, বাঁচতে চাইলে ২০ হাজার টাকা নিয়ে থানায় আয়'

তিনি বলেন, ‘আমার ৩০ পার হয়েছে। এই বয়সেও খুব কম দিন নিজের হাতে ভাত খেয়েছি। অধিকাংশ সময় মা আমাকে খাইয়ে দিয়েছেন। একমাত্র মেয়ে হওয়ায় পরিবারের চোখের মণি ছিলাম। এই হাত দিয়ে নিজেকে বহুবার শেষ করার প্ল্যান করেছি। শেষ পর্যন্ত এই হাত দিয়ে কাউকে হত্যা করলাম। এটা ভেবে ঘুমাতে পারি না। মুহূর্তের মধ্যে কী ঘটে গেল, এখনও চিন্তা করতে পারি না। কেন আরিফুল জাপান থেকে ফিরে এলো। আমি তো জানতামও না সে ওই সময় ফিরবে।’

পারভীন বলেন, ‘কত কাঠখড় পুড়িয়ে আমি কানাডায় এসেছি। আমার স্বামীও অনেক কষ্ট করে কানাডায় নিজের একটু ভালো অবস্থান করছিলেন। আর আরিফুল কত সহজে জাপানে চলে গেল। বিয়ে করে ভালোই তো ছিল। কেন জাপানি স্ত্রীকে রেখে ওকে দেশে ফিরতে হলো। আমার ১৫ বছরের সংসার তো শেষ করেই দিয়েছে। জাপানি মেয়েটার সঙ্গেও তো প্রতারণা করল।’

আরও পড়ুনঃ  ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের তোপের মুখে সভাস্থল ছাড়লেন ওবায়দুল কাদের

আলাপচারিতার সময় বেশ কয়েকবার কান্নাকাটি করেন পারভীন। বলেন, “মা-বাবার কথা খুব মনে পড়ছে। আমার ভাইয়ের ছয় বছর বয়সী বাচ্চাটাকে দেখতে খুব ইচ্ছা হয়। জন্মের পর থেকে ওকে আমি বড় করেছি। অনেকেই জানত, আমার সন্তান সে। আমাকে ‘মাম্মা’ বলে ডাকত। কানাডায় আসার সময় ওর সে কী কান্নাকাটি। ওর কাছে তো আমার পরিচয় খুনি। হয়তো বলছে, আমার মাম্মা কাউকে মেরেছে!”

আরিফুল ও পারভীন দু’জনেরই গ্রামের বাড়ি নরসিংদীতে। জাপানি এক তরুণীকে বিয়ে করে বছরখানেক ধরে সেখানেই বাস করছিলেন আরিফুল। আর স্বামীর সঙ্গে সুখের সংসার করতে গত ২ এপ্রিল কানাডায় যান পারভীন।

গত ১৮ মে রাজধানীর বসুন্ধরার একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে আরিফুল ইসলামকে হত্যার পরদিন কানাডায় উড়াল দেন পারভীন। বাংলাদেশে পরিবারের সদস্যদের না জানিয়ে ১৬ মে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। এ ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে চমকপ্রদ তথ্য পায় পুলিশ।

আরিফুল হত্যার ঘটনায় ভাটারা থানায় করা মামলার তদন্ত চলছে। জানা যায়, নিহত আরিফুল ইসলাম রাজধানীর বিজয়নগরে একটি আবাসিক হোটেলে চাকরি করার সময় জাপানি এক তরুণীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। এক বছর আগে আরিফুল চাকরি ছেড়ে জাপান চলে যান। সেখানে জাপানি তরুণী নাচুকিকে (বর্তমানে নাম আয়েশা) বিয়ে করেন। পরে তিনি পারভীনকেও বিয়ে করেন। গত ১৬ মে আকস্মিক ঢাকায় আসেন পারভীন। ২৪ ঘণ্টার মতো রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকার একটি বাসায় অবস্থান করে পরদিন ফের কানাডার মন্ট্রিলে চলে যান। তবে বসুন্ধরার যে বাসায় তিনি ছিলেন, সেখান থেকে শনিবার (১ জুন) রাতে অর্ধগলিত এক পুরুষের মরদেহ উদ্ধারের পর প্রযুক্তিগত তদন্তে পারভীনের নামটি সামনে আসে।

আরও পড়ুনঃ  ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে এমন ইতিহাস আর হবে না’

তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, বসুন্ধরার যে ভাড়া ফ্ল্যাটে হত্যার ঘটনা ঘটেছে, সেখান থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে। ওই চিরকুট পারভীনের লেখা কিনা, তা নিশ্চিত করে সিআইডির সহযোগিতা নেওয়া হবে। এ ছাড়া ঘটনাস্থল থেকে জব্দ আরও আলামতের ফরেনসিক পরীক্ষা করবে পুলিশ।

কানাডা থেকে ফেরার সময় একটি চিরকুট লিখে স্বামীর কাছে রেখে আসেন পারভীন। সেখানে লেখা ছিল– ‘আমার একটা ভুল লুকাতে গিয়ে আরিফের ট্রাপে পড়ে যাই। বছরের পর বছর সে আমাকে ধর্ষণ করেছে; ১০ লাখ টাকা নিয়েছে। ও প্রতারণা করে সব ভিডিও করে রাখে। আমার মানসম্মান সব শেষ করে দিয়েছে। এর পরও আমাকে বাঁচতে দিচ্ছে না। আমার মরার পর যেন ধর্ষণ, পর্নোগ্রাফি ও প্রতারণা– এই তিনটা মামলা হয় (আরিফুলের বিরুদ্ধে)।’

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ পড়ুন
জনপ্রিয় সংবাদ