সচিবালয়ে ঢুকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কক্ষের সামনে শিক্ষার্থী বিক্ষোভে চাপের মুখে এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রথমে অর্ধেক নম্বরে দুই সপ্তাহ পিছিয়ে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিবের কক্ষে অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েন শিক্ষা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন তিন-চারজন কর্মকর্তা। পরে অনেকটা ‘প্রাণ বাঁচাতেই’ পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত জানান তারা।
বুধবার (২১ আগস্ট) দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এ তথ্য জানিয়েছেন ওই সময় সিনিয়র সচিবের কক্ষে উপস্থিত থাকা এক কর্মকর্তা।
শিক্ষা প্রশাসনের ওই গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ওই সময় কী পরিস্থিতিতে আমরা পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা ওইখানে না থাকলে অনুভব করা সম্ভব না। দুপুরে সভা করে অর্ধেক নম্বরে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।
এরপর সভায় অংশ নেয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে উচ্চপদস্থ কয়েকজন সিনিয়র সচিবের কক্ষে ছিলেন। এমন সময় খবর পাই, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ে প্রবেশ করেছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সিনিয়র সচিবের কক্ষের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে অনেকটা জিম্মি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় ওই কয়েকজন কর্মকর্তাই পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তে আসেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়ের সঙ্গে সভা করে অর্ধেক নম্বরে দুই সপ্তাহ পিছিয়ে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু পরে তাদের আন্দোলনের মুখে ওই সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনা করা হয়। আসলে ওই মুহূর্তে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আর কিছুই করার ছিল না। অনেকটা বাধ্য হয়েই অর্ধেক নম্বরে দুই সপ্তাহ পিছিয়ে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হয়।
এ সিদ্ধান্ত কী মঙ্গলজনক কি-না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পদে থেকে এ বিষয়ে মন্তব্য আমি করতে পারি না। আপনারা সাংবাদিকরা এ বিষয়ে জাতির মতামত নেবেন। তবে পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত সমালোচনার সৃষ্টি করেছে বলে জানতে পেরেছি।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সামনে স্থগিত থাকা এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত জানান শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে এক জরুরি সভায় ১১ সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষা আরও দুই সপ্তাহ পেছানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এছাড়া, ১০০ নম্বরের প্রশ্ন থেকে ৫০ নম্বরের উত্তর দেয়ার মাধ্যমে অর্থাৎ অর্ধেক প্রশ্নোত্তরে বাকি বিষয়গুলোর পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে পরীক্ষার্থীরা সচিবালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
পরীক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল বিকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শেখ আব্দুর রশিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এ সময় সচিবের কক্ষের বাইরে পরীক্ষা না দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনরত অনেক পরীক্ষার্থী। এমন পরিস্থিতিতে স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন কর্মকর্তারা।
এদিকে পরীক্ষা বাতিল করার পর পরীক্ষার ফল কী উপায়ে প্রকাশ করা হবে সে আলোচনা করতে বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে সব শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে সভা করেন শিক্ষা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনরা। সভায় অনুষ্ঠিত হওয়া পরীক্ষাগুলোর নম্বর ও আগের এসএসসি, জেএসসি ও পিইসিই পরীক্ষার ফল মূল্যায়ন করে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রস্তুত করার বিষয়ে প্রস্তাবনা প্রস্তুত করতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের বলা হয়।