রাজধানীর মহাখালী থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বাহিনীটি।
রাজধানীর খিলগাঁও থানায় ২০১৫ সালে ছাত্রদল নেতা জনি হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। গত ২ সেপ্টেম্বর জনির বাবা ইয়াকুব আলী মামলাটি দায়ের করেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ডিএমপির কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন আছাদুজ্জামান মিয়া। চার বছর আট মাস ডিএমপি কমিশনারের দায়িত্ব পালনের পর ২০১৯ সালের আগস্টে অবসরে যান তিনি। এর কয়েকদিন পর তাকে একই পদে একমাসের চুক্তিতে নিয়োগ দেয় সরকার।
এরপর ২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তিন বছরের জন্য জাতীয় নিরাপত্তা সেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়।
আরও পড়ুনঃ কনসার্টের আড়ালে দেহ ব্যবসার জাল ছড়িয়েছেন তাপস
যত গভীরে যাওয়া হচ্ছে ততোই বেরিয়ে আসছে মিডিয়া মাফিয়া কৌশিক হোসেন তাপসের কুকীর্তি। প্রভাব খাটিয়ে সংগীতাঙ্গনকে যেভাবে কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন, তা নজিরবিহীন। সব অপকর্ম প্রকাশ্যে আসার পর তোপের মুখে পড়েছেন গানবাংলা টেলিভিশনের এই কর্ণধার ও সংগীতশিল্পী।
দেশের পটপরিবর্তনের পর জনরোষ থেকে বাঁচতে দিয়েছেন গা-ঢাকা। তবে সামাজিক মাধ্যমে তাকে ছেড়ে কথা বলছেন না সংস্কৃতিপ্রেমী নেটিজেনরা। ফলে নানা বিষয়ে ফেসবুকে পোস্ট করলেও মন্তব্যের ঘর রাখছেন বন্ধ।
এক তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তাপসের অপকর্মের চাঞ্চল্যকর তথ্য। যেখানে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে একের পর এক সাপ বেরিয়ে আসছে। শেখ হাসিনার সাবেক উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকনের প্রশ্রয়ে দেহব্যবসার জাল বিস্তার করেছিলেন।
কর ফাঁকি দিয়ে গানবাংলার নাম করে ইউক্রেন থেকে নারী এনে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি, আন্তর্জাতিক সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মনোরঞ্জনের জন্য পাঠাতেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুইবার দেশটির কয়েকজন নারীকে আটকে দিয়েছিল পুলিশ। তখন খোকনকে ফোন করে ইমিগ্রেশন করিয়ে নেন।
তাপসের সঙ্গে আর্থিক খাতের মাফিয়া সালমান এফ রহমানের সুসম্পর্ক ছিল। তার ফেসবুকে ঢুঁ মারলে দুজনের হাস্যজ্জ্বল ছবিও চোখে পড়বে। ২০২২ সালে যখন সাবেক পর্নো তারকা সানি লিওনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, তখন তা তোয়াক্কা না করে তাকে ঢাকায় আনেন।
এতে পরোক্ষ সহযোগিতা করেন দরবেশবাবা। মেয়ের বিয়ের আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আনা হয়েছে বললেও মূল উদ্দেশ্য ছিল রাঘব-বোয়ালদের মনোরঞ্জন। ওই সময় কলকাতার নুসরাত জাহান, মিমি চক্রবর্তীসহ অনেকে এসেছিলেন। বলিউড নায়িকা নার্গিস ফাখরিও তার হাত ধরে ঢাকায় এসেছিলেন।
তাপসের স্ত্রী ফারজানা মুন্নি ছিলেন স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিউটিশিয়ান। সেই সুবাদে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতার সঙ্গে তার ওঠাবসা ছিল। সেটাকেই কাজে লাগান তাপস। স্ত্রীর কারণে হয়ে ওঠেন ক্ষমতাবান। প্রভাব বিস্তার করেন সংস্কৃতি অঙ্গনে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সব থেকে বড় প্রজেক্ট ছিল জয় বাংলা কনসার্ট। শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ৭ মার্চের ভাষণ উপলক্ষে এই কনসার্ট আয়োজন করা হতো। পুরো অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন তাপস। এ থেকে কোটি কোটি টাকা ঘরে তোলেন তিনি। সূত্র বলছে, শিল্পীদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের বড় অংশ নিজের পকেটে ভরতেন।
তৎকালীন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদের আস্থাভাজন ছিলেন তাপস। ফলে সরকারি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কাজ সহজেই পেয়ে যেতেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশে কনসার্ট আয়োজনের কাজও বাগিয়ে নিতেন তিনি।
সেসবের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন আয়োজিত লাল-সবুজের মহোৎসব, মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান অন্যতম। সেখান থেকে হাতিয়ে নিতেন কোটি কোটি টাকা। ২০২২ সালে বরিশালে ‘জয়বাংলা উৎসব’ নামে অনুষ্ঠানে মিমি চক্রবর্তীসহ দেশের অনেক তারকাকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। সেখানে সালমান এফ রহমান প্রধান অতিথি ছিলেন। এ ছাড়া বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহও ছিলেন।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় অধিকাংশ শিল্পী তাপসের পেছন পেছন ঘুরতেন। এমনকি এই মিডিয়া মাফিয়ার কোরবানির গরু কিনতে দলবেঁধে হাটে যেতেন। এসব করে যদি কোনো বড় আয়োজনে গান গাওয়া যায়!
তাপসের অনেক অপকর্মের ফিরিস্তি এখনও অন্তরালে রয়ে গেছে। তাই সংস্কৃতিমনা নাগরিক তার বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।