গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ফুলপাড় গ্রামের গৃহীনি হালিমা বেগম। করোনাকালীন সময়ে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন স্থানীয় দারিদ্র্য বিমোচন বহুমুখী সমবায় সমিতি নামে একটি এনজিও থেকে। ৪৪ কিস্তিতে ১০৫০ টাকা করে ৪৬ হাজার টাকা পরিশোধ করেন তিনি।
বাকি ছিল ৪ হাজার টাকা। এই টাকা না দিতে পারায় সাত মাসে সুদ গিয়ে দাড়ায় দেড় লাখে। এর এক মাস পরেই টাকা না দিতে পারায় হালিমার স্বামীকে তুলে নিয়ে জোরপূর্বক বাড়ি লিখে নেন এনজিওর মালিক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ভাই দেলোয়ার হোসেন।
এ ঘটনার পর কিছুদিন আগে বাড়িটি অন্যত্র বিক্রি করে দেন দেলোয়ার। নিজের বসতভিটা হারিয়ে এখন অন্যের ভাড়া বাসায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন হালিমা ও তার পরিবার।
অভিযোগ উঠেছে, শুধু হালিমাই নয়, উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারকে ঋণ দিয়ে ইচ্ছে মতো সুদের হার বাড়িয়ে জমি লিখে নিয়েছেন দেলোয়ার। ভুক্তভোগীরা নিজ বসতভিটা ফিরে পেতে এবং তার উপযুক্ত শাস্তি চেয়ে স্থানীয় প্রশাসনের দারস্থ হন। এর মধ্যে ১০ জন বাদী হয়ে ১০টি মামলাও করেছেন দেলোয়ারের নামে।
তিন মাসে নিজ হাতে কোরআন লিখে সেলিমের চমক
মামলাকারীরা হলেন, মুকসুদপুর উপজেলার ডাঙ্গাদুর্গাপুর গ্রামের মিলু মোল্যার স্ত্রী জাহানারা বেগম, একই গ্রামের লিয়াকত গাজীর স্ত্রী সাহিনা বেগম, রবিউল শেখের স্ত্রী হালিমা বেগম, নুরু মোল্যার স্ত্রী আসমা বেগম,
পার্শ্ববর্তী ফুলারপাড় গ্রামের লিটন মুন্সির স্ত্রী রিপা বেগম, একই গ্রামের লিয়াকতের ছেলে তুহিন, পার্শ্ববর্তী সালিনাবক্সা গ্রামের মামুন শেখের স্ত্রী কাকলি বেগম, একই গ্রামের দেলোয়ার সরদারের স্ত্রী বিউটি বেগম ও পার্শ্ববর্তী ডাকপাড় গ্রামের হাজী মো. রুস্তুম শেখের ছেলে ফরিদুল ইসলাম।
মুকসুদপুর উপজেলার ফুলারপাড় গ্রামের গৃহীনি হালিমা বেগম বলেন, করোনাকালীন সময়ে দারিদ্র্য বিমোচন বহুমুখী সমবায় সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। ৪৪ কিস্তিতে ১০৫০ টাকা করে ৪৬ হাজার টাকা পরিশোধ করি। আরও ৪ হাজার টাকা বাকি ছিল।
ওই সময় ৪ হাজার টাকা না দিতে পারায় সাত মাসের সুদ বানিয়েছে দেড় লাখ টাকা। একমাস পরে তাদের দেড় লাখ টাকা আমরা দিতে পারিনি। পরে আমার স্বামীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে জোরপূর্বক বসতবাড়ি লিখে নেন দেলোয়ার। এখন পরিবার নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় জীবনযাপন করছি।
ভুক্তভোগী লিটন মুন্সি বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন বহুমুখী সমবায় সমিতি থেকে আমি ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা ঋণ নেই। ৩৯ কিস্তি শোধ করার পরে আরও ৭টা কিস্তি বাকি ছিল। করোনার সময় ৭ কিস্তি না দিতে পারায় কয়েক মাস পরে এসে দেলোয়ার বলেন যে ৩ লাখ টাকা সুদ হইছে। কিন্ত তা আমি দিতে পারিনি।
এর কিছুদিন পরে এসে তিনি বলেন, সুদ ৬ লাখ টাকা হইছে। পরে আমার জমির পাওয়ার চান তিনি। আমি রাজি না হলে জোর করে তার বাড়িতে আটকিয়ে রেখে আমার জমির পাওয়ার নিয়ে নেন তিনি। পরে দেলোয়ারের রেজিস্ট্রেশন করা পিস্তল দিয়ে গুলি করার ভয় দেখিয়ে আমাকে দিয়ে জমি লেখিয়ে নেন।
তিনি বলেন, আমি প্রশাসনের কাছে দরখাস্ত দিয়েছি এবং আমার জমি ফেরত পেতে মামলা করেছি।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে দারিদ্র্য বিমোচন বহুমুখী সমবায় সমিতি অফিসে গেলে মালিক দেলোয়ার হোসেনকে পাওয়া যায়নি। ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি তাকে।
এ বিষয়ে মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজিজুর রহমান বলেন, এনজিওর এই বিষয়টা জানা ছিল না। মামলায় হত্যার হুমকি উল্লেখ করা হয়েছে। এটা থানা পুলিশের কাজ। আমি জানা মাত্রই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বিষয়টি তদন্ত করতে লিখিত আকারে জানিয়েছি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে এনজিও কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুতই আইনি পদক্ষেপ নেব।
তিনি আরও বলেন, এনজিওর বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত করছি। আশা করি দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।