কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে কক্সবাজার আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে আসামি করা হয়েছে।
২৪ জুলাই (বুধবার) সন্ধ্যায় কক্সবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রাজীবুল ইসলাম মোস্তাক বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় এই মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে ঢাকায় অবস্থানরত নওশাবা সিয়াম নামে ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে ৯৬নং আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে আসামির পরিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
নওশাবা সিয়াম কক্সবাজার পিএমখালী এলাকার মুক্তার আহমেদের মেয়ে। নাওশাবা সিয়ামের নানা আব্দুল হক সিকদার একজন
বীর মুক্তিযোদ্ধা।
এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে ঢাকা মিরপুরের রফিকুল ইসলামের সাথে নওশাবা সিয়ামের বিয়ে হয়। তাদের ঘরে ৩ বছরের একটি মেয়েও আছে। বর্তমানে তিনি ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। নাওশাবা সিয়াম মিরপুর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের গাইনী অ্যান্ড অবস, ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ এবং ল্যাপারোস্কপি সার্জন সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার টি. এইচ. জোহরা মুনমুনের থেকে ৪ মাস ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ভুক্তভোগী নওশাবা সিয়াম বলেন,আমি বর্তমানে আমার শ্বশুরবাড়ি ঢাকা মিরপুরে আছি। কিছুদিন পর আমার গর্ভের বাচ্চাটা পৃথিবীর মুখ দেখবে। আমি গত ১ মাস ধরে খুব অসুস্থ। ২দিন আগে আমার গ্রামের বাড়ি কক্সবাজার থেকে খবর আসে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে কক্সবাজার আওয়ামী লীগের কার্যলয়ে এক ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় আমাকে ৯৬নং আসামি করা হয়েছে এবং পুলিশ আমাকে খুঁজছে। এটি শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।
আমি গর্ভবতী অবস্থায় কক্সবাজার কখন গেলাম! এখন আমি আত্মগোপনে আছি। পরিবারের কারো সাথে দেখা করতে পারছি না। আমি কবে থেকে ঢাকায় অবস্থান করছি সেটি আমার মোবাইল নাম্বারের লোকেশন ও সিডিআর চেক করলে পুলিশ সঠিক বিষয়টি জানতে পারবে এবং আমার ডাক্তারের রিপোর্ট ও আপনারা দেখতে পারেন। আমার ৩ বছরের মেয়ে আমিনাও খুব অসুস্থ। এই অবস্থাতে আমি কঅ করব। এই বিচার আল্লাহ করবে।
নাওশাবার নানা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হক সিকদার বলেন, আমার নাতি সিয়াম বিয়ের পর থেকে স্বামীর ঘর ঢাকা মিরপুরে থাকেন।তার একটি তিন বছরের মেয়েও আছি এবং সে বর্তমানে ৮মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তাকে ষড়যন্ত্র করে এই মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
নওশাবা সিয়ামের ডাক্তারের ফাইল থেকে নাম্বার নিয়ে ঢাকা মিরপুর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের গাইনী অ্যান্ড অবস্, ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ এবং ল্যাপারোস্কপি সার্জন সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার টি. এইচ. জোহরা মুন মুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নাওশাবা সিয়াম আমার পেসেন্ট। কয়েক মাস ধরে তার চেকআপ আমি করছি। সর্বশেষ ২২ জুলাই তিনি আমার সাথে সাক্ষাৎ করেন। আগস্ট মাসের শেষের দিকে তার ডেলিভারির সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ১৬ জুলাই বিকেল ৪টার দিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা বিকেল ৪টায় মিছিল সহকারে কক্সবাজার শহরে আসে। তারা শহরের লাল দিঘীর পাড় এলাকায় গিয়ে যেখানে অবস্থিত জেলা আওয়ামী লীগ, জাসদ ও জাতীয় পার্টির কার্যালয় ভাঙচুর করে। এ সময় আওয়ামী লীগের কার্যলয়ে থাকা কক্সবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রাজীবুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা। পরে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এই বিষয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান বলেন, আহত ছাত্রলীগ নেতা আমাদের এজাহার দিয়েছেন। আমরা এজাহার নিয়েছি। আসামিদের পরিচয় সম্পর্কে আমরা অবগত নয়। সুষ্ঠু তদন্ত করে চার্জশিট দেওয়া হবে।
এই বিষয়ে জানতে, মামলার বাদি কক্সবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রাজীবুল ইসলাম মোস্তাকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও নাম্বার বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।