ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) আলী আশরাফ ভূঞা ও কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
বুধবার (১৭ জুলাই) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নতুল্লাবাদ এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নিলে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। তখন আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে ডিসি আলী আশরাফ ভূঞা এবং কয়েকজন সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী আহত হন।
আরও পড়ুনঃ অবরুদ্ধ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক উদ্ধারে অভিযানে নামবে পুলিশ-র্যাব-বিজিবি
অবরুদ্ধ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক উদ্ধারে অভিযান নামবে পুলিশ-র্যাব-বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ টিম। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল ৭টার আগে থেকেই ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এর আগে গতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর শনির আখড়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা এই মহাসড়কটি অবরোধ করে রাখে। সন্ধ্যার দিকে পুলিশ অবরোধকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ সময় শর্টগানের গুলিতে শিশুসহ অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন- সবজি বিক্রেতা মো. বাবলু (৪০), তার দুই বছরের ছেলে রোহিত, মনিরুল ইসলাম (২০), মো. ফয়সাল (২৭), নবম শ্রেণির ছাত্র মাহিন আহমেদ পিয়াস (১৫) ও মো. সোহাগ (২৮)।
এদিকে রাতভর ওই স্থানে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। ফলে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে আশপাশের এলাকায়। এই অবস্থায় সড়কে যানচলাচল নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ-র্যাব-বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ টিম অভিযান পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বেশ সহিংস রূপ নেয়। এদিন ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে ৬ জন মারা যান। আহত হন কয়েকশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। এ অবস্থায় ওইদিনই সারা দেশের স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বুধবার বন্ধ ঘোষণা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হল ও ক্যাম্পাস ত্যাগ না করার ঘোষণা দিয়েছেন। হলগুলোর ভেতরে অবস্থান করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বেশিরভাগ হল থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বের করে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা প্রসঙ্গে কথা বলার সময় মন্তব্য করেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’
প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। সে প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য প্রত্যাহার এবং কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে রোববার মধ্যরাত থেকেই আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সেই আন্দোলন এখনো চলছে। আজ (বৃহস্পতিবার) সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানী ঢাকাসহ ৬ জেলায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বিজিবি এবং বুধবার বিকেলে আনসার মোতায়েন করা হয়েছে।