বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেছেন, আমার পিতা শহীদ একেএম ফজলুল কাদের চৌধুরী ও বড় ভাই শহীদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে জেলখানায় রেখে নাটক সাজিয়ে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ। আমাদের মতো দেশের বহু মানুষকে হত্যা, গুম ও নির্যাতন করেছে একমাত্র বিএনপি করার অপরাধে ও ইসলামী মূল্যবোধ বুকে ধারণ করার জন্য।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ফটিকছড়ির সদর বিবিরহাটের রাজঘাট চত্ত্বরে বিএনপি আয়োজিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নিজের বড় ভাই মানবতা বিরোধী অপরাদের দায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কথা স্মরণ করে গিয়াস কাদের বলেন, আমার বাবাকে আওয়ামী লীগের জেলে হত্যা করা হয়েছে। আমার বড় ভাইয়ের কথা মনে উঠলে আমার চোখ দিয়ে পানি ঝরে। তাকেও আওয়ামী লীগ ফাঁসি দিয়েছে।
আমি যেদিন শেষ দেখা করতে গিয়েছিলাম, সেদিন বড় ভাই সালাউদ্দিন কাদের আমাকে বললেন- ‘কী হয়েছে তোর মন খারাপ কেন?’ আমি কোন উত্তর দিতে পারিনি, বসে ছিলাম। তারপর আমাকে বসা থেকে তুলে জড়িয়ে ধরে বললেন- ‘চিন্তা করিস না তুই। আমার কিচ্ছু হবে না।’ আজকে যখন আওয়ামী লীগের দোসরদের মেরে আদালতে তুলে তখন আমার ভাইয়ের ভাইয়ের চেহারা চোখে ভেসে ওঠে।
আমার ভাইকেও র্যাব পিটিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় কোর্টে পাঠিয়েছে। সবকিছু আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে ছিল অর্থাৎ বালের। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে ‘বাল’। আমার ভাই তখন নির্বাচিত ফটিকছড়ির জনপ্রতিনিধি ছিলেন। অনেক পত্রপত্রিকা ছিল কিন্তু কেউ কোনো পত্রিকায় লিখেনি।
ফটিকছড়িতে মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি রমজান মাসে একটা ইফতার পার্টিতে ফটিকছড়ি এসেছিলাম। সেদিন আমি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলাম- ‘আপনি সঠিকভাবে থাকেন নয়তো আপনার পরিণতি আপনার মরহুম পিতার চেয়েও খারাপ হবে।’
আমি কি কথাটি খারাপ বলেছিলাম? এ বক্তব্যের কারণে আমার বিরুদ্ধে হাসিনার স্বৈরাচারী সরকার মামলা করে তিন বছরের জেল দিয়েছে। তবে এ আগস্টে স্বৈরশাসকের পতন হবে আর হাসিনা পালিয়ে যাবেন, তা আমি নিজেও কল্পনা করিনি।
‘শেখ মুজিব বাংলাদেশ কবর পেয়েছে, শেখ হাসিনার কবর এখানে হবে? ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে হিন্দুস্তানে পালিয়ে গেছে। গত ৫ আগস্ট এদেশের মানুষ পুনরায় স্বাধীনতা পেয়েছে। ত্যাগ তিতিক্ষার কোনো কমতি ছিল না হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে।’
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে গিয়াস কাদের বলেন, ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। সেটা আমরা দেখলাম। আমাদের উপর দিয়ে যা হয়েছে হলো। এখন তা তাদের উপর দিয়ে যা হচ্ছে, কেমন লাগছে? চট্টগ্রামের আঞ্চলিক একটি প্রবাদ আছে এরকম- ‘পাঁঠাকে কাটে পাঁঠি হাসে, ও পাঁঠি কোরবানি জো তোঁয়াল্লায়ও আছে।’ এখন বুঝুক, তারা মনে করেছিল সকাল হলে সন্ধ্যা হয় না। এটি ভেবে ১৭ বছর রাজত্ব করে গেছে। কিন্তু যেমন সকাল হয়েছিল ঠিক তেমন সন্ধ্যাও হয়েছে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমাদেরও মনে রাখতে হবে। আজকে আমাদের সকাল, আমাদের সন্ধ্যাও নেমে আসবে। দোহাই লাগে এমন কিছু করবেন না আপনারা যেটার জন্য আমাদেরও তাদের পরিণতি ভোগ করা লাগে। আমাদের মূল, নৈতিক ও ঈমানী দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের সেবা করা।
দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কথা টেনে গিয়াস কাদের বলেন, আজকের জাতীয়তাবাদী দলের যদি জন্ম না হতো ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান হতো না। বিএনপির না হলে এ জাতির পরিচিতি বাঙালি হতো বাংলাদেশি হতো না। এই পরিচিতি আজকে বিএনপি এই দেশের মানুষকে দিয়েছে। এক দলীয় শাসন ব্যবস্থাকে কবর দিয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। গত ২০ থেকে ৩০ বছর আওয়ামী লীগ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকে কবর দেয়ার জন্য প্রচুর চেষ্টা করেছে। তাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে তারা এই দলকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে নষ্ট করার চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু তা পারেনি।
বক্তব্য শেষে তিনি তিনবার নাবের তরকারি স্লোগান দিয়ে সমাবেশ থেকে বিদায় নেন।
ফটিকছড়ি পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মোবারক হোসেন কাঞ্চনের সভাপতিত্বে বিএনপি নেতা নাজিম উদ্দিন শাহিন ও মনসুর আলম চৌধুরীর যৌথ সঞ্চালনায় এতে প্রধান আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক সরোয়ার আলমগীর।
এছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উপজেলা, জেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সিনিয়র নেতারা।
এর আগে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী সকালে দক্ষিন ফটিকছড়িতে বেশ কয়েকটি পথ সভা শেষে দুপুরে নাজিরহাট পৌরসভায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হালদা নদীর বেঁড়িবাঁধ পরিদর্শন করেন।